করোনা দায়িত্ব পালন করেও ঝুঁকি ভাতা পায়নি কুবির আনসার সদস্যরা

মো: জয়নাল আবেদিন •


করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাম্পাসে পাহারা দিয়েছি। পরিবারের নিয়ে দুশ্চিন্তা আসলেও দায়িত্ব পালনের কথা ভেবে বাড়িতে যায়নি। আমাদের ‘চাকরি ছোট’ কিন্তু দায়িত্ব বড়। মার্চের শুরুতে করোনার সনাক্ত হওয়ার পর ক্যাম্পাস ফাঁকা হয়ে যায়। চারদিকে নির্জীব, চারদিকে সুনসান নিরব কারো আনাগোনা নেই। এসময়েও আমরা নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্ব পালন করেছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথাগুলো এভাবে বলছিলেন করোনার সময়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক সদস্য।

গেল মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষশূন্য পরিবেশে ক্যাম্পাসে দেখা দেয় নিরাপত্তাহীনতা। তাই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ২৯ জন সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্থ নিরাপত্তা প্রহরী ২৩ জন এছাড়াও আরো দুইজন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জনতা ব্যাংকে ।

নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অন্তত চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার দায়িত্ব পালন করার জন্য তাদের কোন ঝুঁকি ভাতা দেয়া হয়নি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্থ প্রহরীদের আট হাজার করে ঝুঁকি ভাতা দেয়া হয়। জনতা ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করা দুইজন আনসার সদস্যকে ব্যাংক কতৃপক্ষ দেয় ১৫হাজার টাকা করে ঝুঁকি ভাতা দেয়। দায়িত্ব পালনের সময়ে ব্যবহারের জন্য মাস্ক দিলেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়নি তবে ১২-১৫দিন আগেও স্যানিটাইজার দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি দীপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, করোনার সময়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিজস্থ প্রহরীদের আট হাজার টাকা বোনাস দেয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ‘শুধু নিরাপত্তা না, ক্যাম্পাস পয়-পরিষ্কার করা, ঝাঁড়ু দেওয়া, ক্যাম্পাসে ওষুধ স্প্রে করে রোগ জীবাণুমুক্ত করার কাজও আমাদের করতে হয়েছে। কারণ ওই সময় অনেক সুইপাররাও ভয়ে ক্যাম্পাসে আসত না। করোনা আক্রান্তের কথা চিন্তা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যাস্পাসে আমরা নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরি ছোট হলেও দায়বদ্ধতার কারণে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে পারিনি। অন্যদের দিলে আমাদের না দেয়া এটাও বৈষম্য।

আনসার প্ল্যাটুনের কমান্ডার মো:হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যখন করোনার আতঙ্ক তখনো জীবনের ঝুঁকি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যেরা পাহারা দিয়েছে। আমরা কোনো ঝুঁকি ভাতাও পাইনি। মানবিক দিক বিবেচনা করেও হলেও নিরাপত্তা প্রহরীদের ঝুঁকি ভাতা দেয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার সাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্থ নিরাপত্তা প্রহরীদের বোনাস দেয়া হয়েছে। তবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীদের বিষয়ে সরকারীভারে কোন নির্দেশনা না আসায় আমরা বোনাস দিতে পারিনি।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কুমিল্লা জেলা কমান্ড্যান্ট মোস্তাক আহমেদ বলেন, করোনার সময়ে দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি ভাতা দেয়ার বিষয়টি সংশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রজ্ঞাপন জারি বা নীতিমালার উপর নির্ভর করে। তবে বিশ্বাবদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপনে আছে কি না তাদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি আমরা দেখবো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যায়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. অধ্যাপক আবু তাহের বলেন,‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত চাকরিজীবী না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে আমরা প্রণোদনা ভাতা দিতে পারিনা। তাদের ভাতা দিবে সরকার। তাদের প্রতি আমরা বৈষম্য করিনি।’